Sunday, April 19, 2020

Nodi - নদী

মেয়েটার নাম নদী। বয়স কতই বা হবে, মেরেকেটে বছর আট! একদম চলমান পুতুল একটা। তো সেই পুতুলের তিন বছর বয়সী ভাইটির হার্টে ফুটো। তারই চিকিৎসা ব্যাপারে বাংলাদেশ থেকে 'ইন্ডিয়া' আসে বছরে বারকয়েক। এইবার মেয়েটির 'সেমেস্টার' শেষ হওয়ায় সেও সঙ্গে এসেছে। গার্জেন বলতে মা এবং তাঁর এক সম্পর্কিত ভাই। তাঁরা ভোর হতেই বেরিয়ে যান বাচ্চাটিকে নিয়ে। মেয়েটি ঘরে থাকে। ছোট্ট হাতদুটো দিয়ে টুকটুক করে কাজ করে সাধ্যমত। বাকি সময় দেখি ছাদে নয়ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে। এত মায়া জাগে তাকে দেখে...




আমি গিয়েছিলাম মাসির সঙ্গে মাসতুতো ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে। সেবার গিয়ে যে এতগুলো দিন আটকে পড়ব, ভাবিনি। প্রায় এক মাস! দিন দশেক পর থেকেই ফলতঃ শুরু হল মন খারাপ। যতক্ষন ব্যস্ত থাকি, চাপ নেই। ফাঁকা সময়গুলো নিয়ে কি করবো ভেবে পেতাম না। শুধু মন খারাপ। আর কিছুই ভালো লাগে না যেন। 
এদিক ওদিক কাজ সেরে সন্ধ্যে থেকে একেবারে ফাঁকা। এই সময়গুলোকে এড়িয়ে যাবার ইচ্ছেয় যাবতীয় কাজ করতাম টেনে টেনে। তবুও সময় আর কাটতেই চাইতো না কিছুতেই। এরকমই একদিন। সারাদিন হাসপাতালে কাটিয়ে বিকেলে ফিরলাম। রান্না ইত্যাদি সেরে সন্ধ্যের পর আর কিছুই থাকলো না করার মত। হোটেলের বাইরের ছোট সিটটায় বসে আছি চুপ করে। হোটেলটা একটা প্রায়ান্ধকার গলির ভেতর হওয়ায় বড় রাস্তায় গাড়ি চলাচলের আওয়াজ পাওয়া গেলেও দেখা যেতনা কিছুই। এরম পরিবেশে আমার মন খারাপের পালে বাতাস লাগতো। সেদিন বসে বসে কখন যে চোখের জলে গাল ভিজতে শুরু করেছে, টের পাইনি। সম্বিৎ ফিরল একটা কচি গলার ডাকে-"আপু, আপনি কান্না করতাসেন?" চমকে উঠে বললাম "কৈ, না তো!" "মিছা কথা কয়েননা আপু, আমি স্পষ্ট দেখতাসি আপনার চোখে পানি" আমি তাড়াতাড়ি গাল মুছে নিই। "আমি কাঁদিনি সোনা"। "আবার মিছা কথা! জানেন না, মিছা কথা হারাম!" ইতমধ্যে তার ফুলের কুঁড়ির মত হাতদুটো আমার অশ্রু মোছাতে ব্যস্ত। সঙ্গে রিনরিনে গলায় প্রাণকাড়া শাসন। তাকে বেঁধে নিই দু'হাতে। সে প্রতিবাদ না করে বসে আমার কোলের ওপর। এবার আমার দুই গাল তার দুই হাতে ধরে নিয়ে ফিসফিস করে ওঠে "এবার কয়েন আপু, আপনি কিজন্য কান্না করতাসেন? কেউ কি বকা দিসে? আমাকে বলেন, আমি খুব করে বকে দিব তারে।" নদীকে জড়িয়ে ধরে এবার আরও কান্না নেমে আসে আমার ভেতরের সবটুকু ডুবিয়ে দিয়ে। সেই পরি এবার নিশ্চিন্ত স্বরে বলে, "বুঝেছি। আপনার আম্মির জন্য মন খারাপ, তাই না! মন খারাপ করেননা আপু। আমি আছি তো।"
তাকে কি করে বোঝাই, কিছু আগের মন খারাপের কার্যকারণ আর মনেও নেই আমার। এই এতটুকু মায়ের সস্নেহ শাসনের আহ্লাদে আমার ভেতরের নদীতে বান ডেকেছে। চোখে তারই প্লাবন।

ছেলেমেয়েরা আসলেই অনেক পরিণত মননের হয়। তাদের বোধের ব্যাপ্তি কতটা, আমরা বড়রা বোধ করি তা মেপে উঠতে পারিনা সময় সময়। 

প্রায় বছর দশ পার হয়েছে তার পরে। আমার সেই ছোট্ট মা'কে ভুলতে পারিনি আজও। 

Writer- Mon Benerjee

No comments:

INK Monster 🖋

We Publish Any Writer's Short Story, Long Story, Poem. (Beginner & PRO Writer), If You Want To Publish Your Writing In Our Site Then Please Contact With Us.




Comments

Contact Us

Name

Email *

Message *